লিখেছেনঃ কফিল মাহমুদ
২০১৫ সালে আরব দেশগুলো বিশেষকরে সিরিয়া থেকে শরণার্থীদের যে ধাক্কা ইউরোপে লেগেছিলো তা কারোরই অজানা নয়। গ্রীস এবং ইতালি ছিলো সবচে’ বেশিসংখ্যক শরণার্থীদের হোস্ট। জার্মান ন্যাশনাল এবং ইইউ লেভেল এই ক্রাইসি টেকল দেওয়ার জন্য ‘বার্ডেন শেয়ারিং পলিসি’ হাতে নেয়। এই পলিসি মূলত ইইউভুক্ত সবদেশ যেনো সন্তোষজনক পরিমাণে শরণার্থী তাঁদের দেশে নেয় সেটার বাধ্যবাধকতা। জার্মানি প্রায় একমিলিয়ন শরণার্থী নিজেদের দেশে নিয়ে উদারতার অনন্য নজির স্থাপন করে। এই একমিলিয়ন শরণার্থীদের আবার ইন্টার্নালি পুরো দেশব্যাপী রিডিস্ট্রিবিউট করার প্রয়োজন দেখা দেয়। ন্যাশনাল রিডিস্ট্রিবিউশন অনুযায়ী আল্টেনা শহরকে বলা হয় তারা যেনো ৩০০ জন রিফিউজি তাঁদের শহরে নেয়। মেয়র ডঃ আন্দ্রেজ হলস্টেইন নিজে গ্রীক রিফিউজি ক্যাম্প পরিদর্শনে যান, তাঁদের কষ্ট দেখে সেখান থেকে ফিরে এসে চ্যান্সেলর মের্কেলকে অনুরোধ করেন যেনো তাঁর শহরে আরো বেশি, অন্তত ৪০০ রিফিউজি দেওয়া হয়।

বার্লিনে যাদের চলাফেরা, আপনারা জানেন, যদি পাংক্ট্রাসে/অজলয়ার স্ট্রাসেতে যান, দেখবেন এই দুইটি জায়গায় খালি আরব আরব। এটি বার্লিন নাকি রিয়াদ কনফিউশনে পড়ে যাবেন। এরকম হওয়ার কারণ হলো শরণার্থীদের সেগ্রেগেশন, সেন্ট্রালাইজেশন বা কোয়ারেনটাইনও বলতে পারেন। এই সেগ্রিগেইটেড বা কোরেন্টাইন্ড অবস্থার জন্য স্থানীয় সরকার এনং রিফিউজি দুইটি অংশই দায়ী। এরফলে রিফিউজিরা ন্যাটিভ জার্মানদের সাথে মিশতে পারছে না, কালচারাল ইন্টেগ্রেশনও হচ্ছেনা।
কিন্তু, আলতেনা তে এই অবস্থার পুরোপুরি বিপরীত অবস্থা লক্ষ্য করা যায়। রিফিউজিরা সেখানে যাওয়ার পর একদম ডে-ওয়ান থেকে তাঁদের টেককেয়ার করা হয়। ন্যাটিভ জার্মানদের গ্যাপেগ্যাপে অর্থাৎ ডিসেন্ট্রালাইযড হাইজিং এর ব্যাবস্থা করা হয়। কেউ পড়তে চাইলে স্কুল কলেজ ইউনিভার্সিটি যোগ্যতা অনুযায়ী ভর্তির ব্যবস্থা করা হয়। ইন্ডিভজুয়াল রিফিউজিকে টেককেয়ার করার জন্য ইন্ডিভিজুয়াল ন্যাটিভকে নিয়োগ দেওয়া হয়। এরফলে খুব সহজেই তারা ভাষাগত দক্ষতা আয়ত্ত করতে পারছেন, কালচারালি ইন্টেগ্রেটেড হয়ে যাচ্ছেন অন্য শহর থেকে অনেক কম সময়ে।

মেয়রের এই সিদ্ধান্তের বিরোধিতা অনেক স্থানীয় করেছেন, মেয়রকে একবার ছুরিকাঘাতও করা হয় রিফিউজিকে গ্রহন করার সিদ্ধান্তের জন্য। কিন্তু তিনি পিছপা হননি। তিনি তাঁর জনগণকে বুঝাতে সক্ষম হয়, শরণার্থীরা আমাদের জন্য বোঝা নয়, তারা আমাদের অর্থনীতি এবং সোসাইটির জন্ন্য এডেড ভেল্যু।
ওইসিডির রিপোর্ট অনুযায়ী এই শহরে শরণার্থীরা সবচে ভাল আছেন। রিফিউজিদের সাথে বর্ণবাদী ব্যবহার খুবই সাধারণ ঘটনা জার্মানিতে। কিন্তু আল্টেনার ব্যাপারে রিফিউজিরা ঠিক উল্টো বর্ণনা দিয়েছেন। আল্টেনাই জার্মানির প্রথম কোনো শহর যেটি National Integration Prize জেতে।
নদী এবং পাহাড়ঘেরা ছোট্ট এই শহরটি ভ্রমন পিপাসুদের জন্য হতে পারে একটি আদর্শ গন্তব্য।
সোর্সঃ https://bit.ly/2NIoT2F