
জার্মানিতে মসজিদ থাকলেও মাইকে আজান হয়না। শেষবার আজান শুনেছিলাম ঠিক ৮ মাস পূর্বে, যখন দেশে ছিলাম। সূর্যের আবির্ভাবের উপর ভিত্তি করে এখানে সামার, উইন্টারে নামাযের সময়ের বড় রকমের পরিবর্তন হয়। উইন্টারে সন্ধ্যা হয় সাড়ে ৪ টায়, সামারে সেটা গিয়ে ঠেকে ৯ টার পর। একদিন জুম্মার নামায পড়তে গিয়ে লক্ষ্য করলাম কেবলার দিকটাও পালটে গেছে; দক্ষিন-পূর্ব দিকে ফিরে নামায পড়ছি। দেশের ধর্মীয় সংস্কৃতির সাথে এখানকার ধর্মকর্মের অনেক কিছুই মেলেনা।
যে এলাকাটায় থাকি এখানে মুসলমান, বিষেশ করে এরাবিয়ানদের সংখ্যা অনেক। এরা খানিকটা ভবঘুরে ও উশৃঙ্খল স্বভাবের। ডর্মের সামনে প্রায় সময় রাত ২ টা, ৩টা পর্যন্ত হৈ-হুল্লোড় করে, ড্রিঙ্কস করে। অন্যের অসুবিধা হচ্ছে কিনা সেব্যাপারের ওদের কোন মাথাব্যাথা নেই। কাল মধ্যরাতে হঠাৎ গযলের আওয়াজ শুনতে পেলাম। অনেকটা মিলাদের দরুদের মত শুনতে। বেলকনিতে গিয়ে দেখি ঐ এরাবিয়ানদেরই কেউ একজন গজল গাইছে, অন্যরা চুপচাপ শুনছে। কিছুটা অবাক হলাম এবং মনটা ভালোলাগা আবেশে ভরে উঠল।
আগামীকাল এখানে প্রথম রমজান, অথচ কোথাও রমজানের কোন আমেজ নেই। সবই চলছে স্বাভাবিক গতিতে। দেশে রমজান মানেই একটা বিশেষ অনুভূতি, ভিন্ন লাইফস্ট্যাইল; মুসল্লিতে ভরপুর মসজিদ, খতম তারাবী, ভোররাতে একসাথে সেহরী, হরেকরকম ইফতারের আয়োজন। চারদিকের আগাম ঈদের সুবাস। তার কিছুই এখানে নেই, থাকবে না। প্রতিদিনকার মত ক্লাস করতে হবে, জবে যেতে হবে, একা একা সেহরি-ইফতার করতে হবে। রাতের ঐ গযলের সুর মনে করিয়ে দিলো রোজা রাখা হবে ঠিকই, কিন্তু রমজানের সুখকর অনুভূতিটা অপ্রাপ্তিই রয়ে যাবে।

লিখেছেন Kawsar Ul Hoq
Bonn, Germany
IELTS: 7.5 (L-8.5, R-7.5, W-6.5, S-7)
Exam: October 13, 2018.