
জার্মান বা বিদেশিদের মাঝে বাংলাদেশিদের সামাজিকতার এক বিশাল সুনাম রয়েছে। বিশেষ করে দাওয়াত দিয়ে খাওয়ানো বা আড্ডা মারা বা অন্যান্য সামাজিকতাতে আসলে আমরা অনেক এগিয়ে। কিন্তু জার্মান বা বিদেশিরা বাংলাদেশিদের সাথে অনেক ক্ষেত্রে একেবারেই ফ্ল্যাট শেয়ার করতে চায় না। সবার কথা ওই বাংলাদেশি ব্যক্তি হিসেবে খুবই চমৎকার, কিন্তু তার সাথে ফ্ল্যাট শেয়ার করা এক রকম অসম্ভব। আমাদের আসলে কিছু অভ্যাসের কারণে এমন খারাপ ধারণা হয়ে থাকে। জার্মানিতে যেসব বাংলাদেশি আছেন তারা এই ব্যাপারে আরো ভালো বলতে পারবেন।
১। আমরা আমাদের ব্যবহার করা মুজা প্রতিদিন বা মিনিমাম দুই দিনে একবার পরিবর্তন করি না। ঘরে বিদেশি কেউ পায়ের গন্ধ একেবারে সহ্য করতে পারে না। ২। ঘরে ঢুকে আমরা কেউ হাতমুখ ধুয়ার সময় পা ধুই না। জার্মান বা ইউরোপিয়ানরা খুবই হাইজিন সচেতন। প্রায় সবাই ঘরে ঘরোয়া স্যান্ডেল বা মুজা পরে থাকে। যদি পা না ধোয়া হয়, তাহলে তার ময়লা বা গন্ধ তারা খুবই ঘৃণা করে। ৩। একটা ভুল ধারণা রাখা যে, আমার ব্যক্তিগত রুম আমি যেভাবে খুশি রাখবো বা যখন খুশি পরিষ্কার করবো। এটা অন্য রুমমেটরা খুবই অপছন্দ করে। কারণ তারা মনে করে ওই রুম থেকে ময়লা পরবর্তীতে অন্য জায়গাতে ছড়িয়ে যাবে। আর কারো রুম ময়লা থাকলে বিদেশিরা তাকে নোংরা বলে মনে করে। অনেক ক্ষেত্রে এড়িয়ে চলে। ৪। রান্নাঘরের ফ্রিজ পরিষ্কারের ব্যাপারে মনোযোগী না হওয়া। এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ৫। টয়লেট করার পরে পর্যাপ্ত পানি না ঢালা বা ব্রাশ না করা। আমরা বাংলাদেশে এটা খেয়াল করি না, কিন্তু এটা এখানে খেয়াল রাখতে হবে। ৬। নিজের রুমের ভিতর থেকে টেলিফোনে এত জোরে কথা বলা, আশেপাশের সকল রুম থেকে শুনা যায়। এটা মোটেও ভালো কিছু না। ৭। বাংলাদেশের সময় চিন্তা করে মধ্যরাত পর্যন্ত কথা বলা। এর জন্য আমি এমনও শুনেছি বাংলাদেশিকে বাসা ছাড়ার নোটিস দিয়েছে। আপনি কথা বলার সময় অন্যদের প্রতি সম্মান রেখে, জার্মান সময়ে সকালে বা বিকালে কথা বলতে পারেন। ৮। রাত ১০টার পরে রান্না ঘরে মশলা দিয়ে রান্না না করা। তাতে পুরো ঘর রাতে মশলার গন্ধ হয়ে যায়, যা বিদেশিরা পছন্দ করে না। আপনি রান্না করলে রাত ১০টার আগেই শেষ করে ফেলুন। আমি এই নিয়ে প্রায়ই সময়ে সমস্যা হতে দেখেছি। ৯। রুমমেট গার্লফ্রেন্ড বা বয়ফ্রেন্ড নিয়ে আসলে বিশ্রী ভাবে তাকানো বা রিয়েক্ট করা। আসলে আমরা এসব দেখে বড় হইনি, তাই এমন হতে পারে। তবে জার্মানিতে আমাদেরকে এসবে বিশ্রী রিয়েক্ট না করার বা একে স্বাভাবিকভাবে দেখা শিখতে হবে। ১০। আরেকটা খারাপ দিক হলো, আমরা যখন নিজের রুমে কোনো গেস্ট রাখবো তখন কোনো রুমমেটকে জিজ্ঞেস না করা। এটা বিদেশি রুমমেটরা ভালোভাবে নাও নিতে পারে। বেস্ট হলো আগে রুমমেটদের জিজ্ঞেস করা, তারপরে ওই গেস্ট এর পক্ষ থেকে একবার রুমমেটদের খাওয়ানো। যদি পরিস্থিতি জিজ্ঞেস করার মতো নাও হয়, তারপরেও রুমমেটদের একবার দাওয়াত দিয়ে গেস্টের পক্ষ থেকে খাওয়ানো। কারণ রুমমেট রা চিন্তা করে, ওই গেস্ট তাদের সাথে তাদের টয়লেট বা কিচেন শেয়ার করছে অথচ তাদেরকে ও তেমন ভালোভাবে দেখছেনা।
আমি নিশ্চিত জার্মানিতে থাকা বাংলাদেশিরা খুবই ভালোভাবে বুঝবেন এই ছোট ব্যবহারগুলো কত গুরুত্বপূর্ণ। কমেন্টে আপনাদের মতামত বা অভিজ্ঞতা আশা করছি। আপনি উপকার পেলে আমাদের এই BESSiG গ্রুপে আপনাকে ২০জন মেম্বারকে যোগ করিয়ে দেবার অনুরোধ রইলো। তাহলে চেষ্টাটা ভালো লাগবে।
ছবির সূত্র: ইন্টারনেট। লেখার সূত্র: লেখকের মগজ।
লেখক Nur Mohammad
এই লেখা পড়ার পরে কোন প্রশ্ন থাকলে বা মতামত দিতে চাইলে অথবা কাউকে ট্যাগ করতে চাইলে