
লিখেছেনঃ ইকবাল তুহিন

প্রিয় ওয়েবসাইট ভিজিটর আশাকরি ভালো আছেন। বিদেশে উচ্চ শিক্ষা নিয়ে বাংলাদেশী শিক্ষার্থীদের কিছু দুর্বলতার জন্য অনেক সুযোগ হাতছাড়া হয়ে যাচ্ছে, যা মোটেও কাম্য নয়। আমাদের শিক্ষার্থীরা আশেপাশের দেশগুলোর শিক্ষার্থীদের তুলনায় কোন অংশে কম প্রতিভাবান নয়, তাই সমান সুযোগ নেওয়ার কথা তাদের কিন্তু বাস্তবে হচ্ছে উল্টো। আমার এই লেখায় আমাদের উচ্চ শিক্ষা নিয়ে দুর্বলতা গুলো তুলে আনার চেষ্টা করেছি। আশা করি এ ব্যাপার গুলো সমাধান করতে পারলে আমাদের সফলতা কেউ ঠেকাতে পারবেনা। আমি আসলে সমস্যা গুলো সবার তা বলছি না তবে বেশি ভাগের।
চিন্তার সীমাবদ্ধতা
--------------------
আমাদের চিন্তা অনেকাংশে একটা নিদিষ্ট গণ্ডির ভিতরে আটকে আছে। বেশি ভাগ লোকই বিসিএস আর চাকুরী ছাড়া আর বড় কিছু চিন্তা করেনা। আরে ভাই দেশের এই বিশাল বেকারদের কয়জনকে এই প্রতিষ্ঠানগুলো মানুষের চাকুরী দিবে! আরও এই রকম শত প্রতিষ্ঠান গড়ার দায়িত্ব আমার আপনার, যার মাধ্যমে নতুন নতুন চাকুরীর সুযোগ তৈরি হবে। আমাদের এক একজনকে এক একজন উদ্যোগতা হয়ে উঠতে হবে। ঝেড়ে ফেলুন মাথা থেকে আমাকে দিয়ে হবেনা, অমুকে দিয়ে হবে তমুকে দিয়ে হবে, আরে আপনারও তো তার মত হাত-পা আছে। আগামী দিনে জ্ঞান আর আর্থিক ভাবে যারা নেতৃত্ব দিবে তারাই সমাজ চালাবে, তাই এখন থেকে জেগে উঠার কোন বিকল্প নাই। আপনার ক্যারিয়ার আর সমাজের জন্য কিছু করার উপলক্ষ এক করে দিন আর ইনফ্লুএনন্সিং সেক্টরে ক্যারিয়ার নির্বাচন করুন, যেন আপনি দেশ ও সমাজের জন্য ভালো ভাবে অবদান রাখতে পারেন আরও কিছু মানুষকে আপনার দ্বারা প্রভাবিত করতে পারেন। অবশ্যই আপনার আগ্রহকে গুরুত্ব দিন।
বিসিএস রোগ!
---------------
বিসিএস! নামে চাকুরির পরীক্ষা হলেও বাংলাদেশের রাষ্ট্র ও সমাজ-বাস্তবতায় এখন অন্যতম প্রভাবশালী ডিসকোর্স। এক অম্ল-মধুর দ্বন্দ্বমুখর বাস্তবতা নিয়ে আমাদের ট্র্যাডিশনাল শিক্ষিত তরুণ-সমাজের মনোজগতকে ঝাঁকুনি দিতে কিছুদিন পরপরই আসে বিসিএস। গবেষক, উদ্যোগতা, কর্পোরেট বাক্তিত, সাংবাদিকতা, নাটক, সিনেমা, শিল্পকলা, কৃষক, কৃষি, যুদ্ধ, প্রেম, বিরহ, জন্ম, মৃত্যু-সব কিছুকে কে ছাপিয়ে প্রধান বিষয় হয়ে উঠে বিসিএস যা আমাদের অনেক মেধা অপচয় করছে।
IELTS/ TOFEL
--------------
IELTS/ TOFEL হল ইংরেজি ভাষার দক্ষতা প্রমাণের আন্তর্জাতিক স্বীকৃত পরীক্ষা। সাধারণত TOFEL আমেরিকায় উচ্চ শিক্ষা জন্য আর অনন্যা দেশের জন্য IELTS, তবে অনেক দেশে দুটোই গ্রহণ করা হয়। IELTS এ স্ট্যান্ডার্ড স্কোর হল ব্যাচেলর লেভেলে ৬ এবং মাস্টার্স পর্যায়ে ৬.৫। IELTS ছাড়া বিদেশে উচ্চ শিক্ষা প্রায় অসম্ভব বা সুযোগ খুবই সীমিত। অনেকে অনেক সুযোগ নষ্ট হয় শুধু মাত্র IELTS এর জন্য। IELTS অন্য আট- দশটা পরীক্ষার মত একটা পরীক্ষা যেখানে আপনার ভালভাবে প্রস্তুতি নিলে ভালো করা কোন ব্যাপার না। আমাদের ভাইয়েরা অনেক মেধাবী অনেকে হাজার হাজার স্টুডেন্টদের সাথে প্রতিযোগিতা করে পাবলিক ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি হয়েছে, অথচ IELTS দিতে ভয় পায়, যেখানে কোন প্রতিযোগী নাই, কোন ফেল নাই!! আসুন চিন্তার দাসত্ব ঝেড়ে ফেলি, বিজয় আমাদের হবেই।
-----------------
GMAT/GRE হল এনালিটিকেল দক্ষতা আন্তর্জাতিক স্বীকৃত সনদ। এই সনদ আপনি এক জন গ্র্যাজুয়েট হিসাবে আপনার একাডেমিক দক্ষতার বিশ্বব্যাপী প্রমাণ করতে পারবেন। সাধারণত বিজনেসের শিক্ষার্থীদের জন্য GMAT আর বিজ্ঞানের জন্য GRE। GRE তে স্ট্যান্ডার্ড স্কোর হল ৩০৫+। আমেরিকা, কানাডা বা সুনাম ধারি প্রতিষ্ঠানে পড়াশুনার জন্য GMAT/GRE দরকার, তবে ইউরোপের অনেক দেশেই GMAT/GRE ছাড়া পড়াশুনা করা যায়। GMAT/GRE থাকলে আপনি যেকোন ভর্তি বা স্কলারশিপ এর প্রতিযোগিতায় এগিয়ে থাকবে। আমাদের উচিততো অন্য দেশের শিক্ষার্থীদের তুলনায় এগিয়েই থাকা তাই আপনার অনার্স লেভেলে পড়াশুনার সাথে সাথে আস্তে আস্তে শুরু করে দিন GMAT/GRE এর প্রস্তুতি।
একটু চেষ্টা
------------
আমাদের মানুষজন অনেক পরিশ্রমী বাক্তি জীবনে, কিন্তু উচ্চ শিক্ষার ক্ষেত্রে অনেকের ক্ষেত্রে তা বিপরীত। অনেকে একটু খুঁজে দেখতে রাজি না, কিছু নিজে চেষ্টা করে দেখার আগেই প্রশ্ন করতে থাকি অথচ দেওয়া লিঙ্কে একটা ক্লিক করলেই তা পাওয়া যায়।
অন্যের উপর নির্ভরশীলতা
....................................
আমাদের অনেকেই অন্যের উপর উচ্চ শিক্ষার ব্যাপার গুলোতে খুব বেশি মাত্রায় নির্ভরশীল থাকে অথচ তিনি নিজে একটু চেষ্টা করলেই তা পারে। অনেক ক্ষেত্রে এই নির্ভরশীলতা হতাশার কারন হয়। দরকার আপনার আপনাকে চেষ্টা করতে হবে, অন্য কেউ হয়তো আপনাকে পথ দেখিয়ে দিবে কিন্তু হাঁটতে আপনাকেই হবে।
আগ্রহ
.........
আগ্রহ সব কাজের মূল। আগ্রহ না থাকলে কোন কাজে সাফল্য পাওয়া যায়না। আগ্রহ তৈরির জন্য নিজের ভূমিকা আসল সেখানে শুধু অন্যরা অনুঘটক হয়ে কাজ করতে পারে। কিন্তু দুঃখজনক ব্যাপার হল আমাদের অনেক মেধাবী নিজ থেকে উচ্চ শিক্ষার তাগিদ অনুভব করেননা বিসিএসের ভিড়ে।
ঝুঁকি নেওয়া
--------------
পরিবর্তনের জন্য ঝুঁকি নেওয়ার কোন বিকল্প নাই। পরিবর্তন নতুন সম্ভাবনার সৃষ্টি করে। আমাদের বড় একটা সমস্যা হলও আমরা পরিবর্তন আর সমালোচনায় ভয় পাই। আপনার দেশে জব আছে আপনি বিদেশে এসে ঝুঁকি নিতে চান না নতুন একটি ভাষার, সিস্টেমের তাহলে আপনি বিশ্ব দেখবেন কি ভাবে, আপনার জ্ঞানের বিশ্বায়ন হবে কিভাবে? পড়াশুনা করে দেশে ফিরে গিয়ে আপনি দিতে পারেন অনেক গুরুত্বপূর্ণ সার্ভিস যা দেশে থেকে আপনি ভাবতেনই না। ঝুঁকি নিতে হবে না হলে সাফল্য ধরা দিবেনা, তবে অবশ্যই ঝুঁকি বিশ্লেষণ করে সঠিক কর্মপ্রচেষ্টা চালাতে হবে।
লেগে থাকা
------------
অনেক ক্ষেত্রে আমরা সময়, শ্রম আর চেষ্টা দিয়ে লেগে থাকিনা। সফলতার জন্য ব্যর্থতা স্বাভাবিক কিন্তু হতাশ হওয়া যাবেনা। লেগে থাকলে এক সময় সাফল্য ধরা দিবেই।
আল্লাহ আমাদের চেষ্টাগুলোকে কবুল করুক। আমাদের ক্যারিয়ার- সাফল্য যেন আমাদের ভালো কাজে লাগে, দেশ ও সমাজের জন্য কাজে লাগে। আমরা যেন সফলতার পর সমাজ, দেশ তথা আমাদের দায়িত্ব ভুলে না যাই।
©️ লেখার মেধাস্বত্ব শুধুমাত্র লেখকের জন্য সংরক্ষিত