

লিখেছেনঃ এন এইচ আশিস খান
MA in English and American Studies, Ruhr-Universität Bochum, Germany
(লেখাটি শুধুমাত্র ফুটবল প্রেমীদের জন্য। অন্যরা ইগনোর করতে পারেন)
ডর্টমুন্ড আমার খুব ভালোবাসার শহর। জার্মানিতে আমি যেখানে বাস করি সেখান থেকে ডর্টমুন্ডের দূরত্ব বড়জোর দশ মিনিট। খণ্ডকালীন জব আর বন্ধুবান্ধব থাকার সুবাধে একটা বড় সময় আমাকে ডর্টমুন্ড কাটাতে হয়। ডর্টমুন্ডের ফুটবল প্রেমীদের উন্মাদনা তাই আমার খুব কাছ থেকে দেখা।প্রতি ম্যাচে গড়ে ৮০ হাজার দর্শক উপস্থিতি নিয়ে ইউরোপ তথা বিশ্বের সবচেয়ে বিশ্বস্ত ফ্যানদের এক ফুটবল ক্লাব বরুশিয়া ডর্টমুন্ড। দর্শক গ্যালারির সেই অবিচ্ছেদ্য হলুদ প্রাচীর আর উন্মত্ত ভক্তদের ফুটবল প্রাণোদনায় অভিভূত হয়ে লন্ডন টাইমস পত্রিকা ডর্টমুন্ডের ফুটবল স্টেডিয়াম সিগন্যাল ইদুনা পার্ককে অভিহিত করেছে ফুটবলের এক অনন্য উপাসনালয় হিসাবে।তবে কাছ থেকে না দেখলে বুঝা যাবে না যে কতোটা প্রগাঢ় ডর্টমুন্ড ফ্যানদের ফুটবল প্রেম।শনিবার বিকালগুলোতে যখন হলুদ জার্সি আর স্কার্ফ ধারীদের যন্ত্রণায় ডর্টমুন্ডের রেলস্টেশনে ট্রেনে উঠা যায়না তখন বুঝে নিতে কষ্ট হয় না যে আজ ডর্টমুন্ডের ম্যাচ আছে। বরুশিয়ার হোম ম্যাচ থাকলে পুরো ডর্টমুন্ড শহর ছেয়ে যায় হলুদের আচ্ছাদনে।শহর থেকে স্টেডিয়াম পর্যন্ত দলবেঁধে ভক্তদের গান গেয়ে গেয়ে যাওয়া না দেখলে কেউ বুঝতে পারবে না ফুটবল কখনো কখনো কিভাবে জীবনের চেয়ে বেশি কিছু হয়ে দাঁড়ায়।
আমি নিজে একজন ফুটবল ফ্যান বলেই এই উন্মত্ত ফ্যানদের সাথে সিগনাল ইদুনা পার্কে বসে একটা ফুটবল ম্যাচ দেখার বাসনা আমার অনেক দিনের।আন্ডারগ্রাউন্ড রেইল যতবার সিগনাল ইদুনা পার্কের স্টপ ওয়েস্টফালেন স্টেশনে পৌঁছায় ততোবারই বুকের ভেতর অদ্ভুত শূণ্যতা অনুভব করি। পরক্ষণেই ভাবি আমার কাছে তো ফুটবল মানে মেসি। সারাবেলা ডর্টমুন্ডে থেকেও সিগনাল ইদুনা পার্কে না যেতে পারলেও তাই হাজার মাইল দূরে বার্সেলোনা গিয়ে ক্যাম্প ন্যুতে বসে মেসির খেলা দেখা মিস করিনি।
আমি জার্মানি আসার পর থেকেই যখনি চ্যাম্পিয়নস লিগের ড্র হয়েছে তখনি মনে মনে দোয়া করেছি যেন বরুশিয়ার সাথে বার্সেলোনার খেলা পড়ে। কখনোই এই ইচ্ছা পূরণ না হওয়ায় সিগন্যাল ইদুনা পার্কে মেসির খেলা দেখার আশায় জার্মানি-আর্জেন্টিনা ইন্টারন্যাশনাল ম্যাচের টিকিট কাটার পর যখন শুনলাম মেসি তিন মাসের জন্য আন্তর্জাতিক ফুটবল থেকে নিষিদ্ধ তখন আমার আশা দূরাশাই রয়ে গেলো। অবশেষে যখন আমার ইচ্ছা পূর্ণ হলো তখনো ইঞ্জুরড মেসির ডর্টমুন্ডে আসা নিয়ে সংশয়। সব সংশয় দূর করে মেসি এখন ডর্টমুন্ডে। সিগন্যাল ইদুনা পার্কের হলুদ প্রাচীর ভেদ করে আজ সারা ডর্টমুন্ড যখন বিমোহিত হবে মেসি যাদুতে তখন আমার বুকের বাঁ পাশে চিনচিনে ব্যাথাটা আবারো মাথাচাড়া দিয়ে উঠবে। এই উন্মত্ত ডর্টমুন্ড ফ্যানদের জন্যই যে শত চেষ্টা করেও আমার এতো আকাঙ্ক্ষার ম্যাচের টিকিট পাইনি।
অন্যসব ম্যাচের মতোই এ ম্যাচটিও আমাকে দেখতে হবে আমার কম্পিউটার স্ক্রিনে। অথচ হতাশ চোখে জানালা দিয়ে যখন বাইরে তাকাবো তখনো চোখের সামনে ধরা দিবে ডর্টমুন্ডের মোহময়ী ফুটবল স্টেডিয়াম। হ্যাঁ, ডর্টমুন্ডের এই ফুটবল মন্দিরের এতোটাই কাছে বাস করি আমি যে আমার বিল্ডিংয়ের জানালা দিয়ে স্পষ্টভাবে দেখা যায় সিগন্যাল ইদুনা পার্ক।সারা বিশ্বের চোখ যখন আজ আটকে যাবে এই সিগনাল ইদুনা পার্কে আমি তখন জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে ভাববো- এতো কাছে থেকেও মেসি আজ আমার থেকে কতো দূরে। বুকের বাঁ পাশের ব্যাথাটা ততক্ষণে নিশ্চই অসহ্য মাত্রায় পৌঁছে যাবে।